(প্রিয়.কম) খালেদা জিয়া ছাড়া গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
১২ সেপ্টেম্বর, বুধবার দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রতীকী অনশনের কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘মূল মামলায় জামিন হওয়ার পরও সরকার ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ব্যতীত দেশের গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘সারাদেশ আজকে ঐক্যবদ্ধ। যেসব রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ায় কাজ করছে তারাও বলছে, দেশি-বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বলছে আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।’
‘তাই স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন দেশে আর হতে দেওয়া হবে না। কারণ ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।’
সরকার ও পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনাদের সময় শেষ। মামলা, গ্রেফতার করে বিএনপির দাবি আদায়ের আন্দোলন দমন করা যাবে না। আপনারা যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তারা আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন।’
‘যারা এখনো আওয়ামী লীগের কথায় কাজ করছেন তাদেরকেও কিন্তু আগামীতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই অযথা বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার ও মামলা করবেন না।’
আজকের প্রতীকী অনশনের আগে আরও দুবার প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। যার একটি কর্মসূচি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অপর একটি কর্মসূচি ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে পালন করেছিল দলটি।
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে ১২ সেপ্টেম্বর, বুধবার সকাল ১০টা থেকে এ প্রতীকী অনশনে বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালনের নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা থেকে হলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সকাল ৯টা থেকেই মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে আসতে থাকে। তবে ১০ সেপ্টেম্বর মানববন্ধনের পর নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্কের কারণে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল অপেক্ষাকৃত কম।
প্রতীকী অনশনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সময় আসতেছে। সময় বেশি দেরি নাই। এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে যে কর্মসূচিতে এই সরকারের নৌকা ভেসে যাবে।’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে মওদুদ আরও বলেন, ‘সময় মাত্র মাসখানিক। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এবার রাজপথে নেমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ, কারাগারে। তাকে সুস্থ করতে সরকারের কোনো প্রচেষ্টা নেই। বরং খালেদা জিয়াকে জেলখানায় তিলে তিলে মারার ষড়যন্ত্র করছে সরকার।’
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এই দেশের কোটি কোটি মানুষ খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে আগামী দিনে দেশের চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে।’
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই গণতান্ত্রিক লড়াই চলবে জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই গণতান্ত্রিক লড়াই চলবে। সেই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পানি পান করিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতীকী অনশন ভাঙান।
সমাপনী বক্তব্যে এমাজউদ্দীন বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত, যা থেকে উত্তরণের পথ আগামী জাতীয় নির্বাচন। যে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। কারণ আমরা আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র হারিয়েছি। তা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আগামী সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ফিরে পেতে চাই।’
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নাজিমুদ্দিন রোডে ঢাকার পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ, প্রতীকী অনশন, মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্শন, গণস্বাক্ষর অভিযান, বিভাগীয় শহরে জনসভা, কালো ব্যাজ ধারণসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি।
প্রিয় সংবাদ/হাসান/আজাদ চৌধুরী
পাঠকের মন্তব্য(০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন